অন্যকে সংশোধনে আমরা যতোটা তৎপর, নিজের সংশোধনে ঠিক ততোটাই উদাসীন। অন্যের ভুল ধরা, দোষ খোঁজা ও সমালোচনাকে আমরা রীতিমত ইবাদতের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছি। আফসোস!
.
সবসময় অন্যের পেছনে পড়ে থাকা, বর্তমান সময়ের ফিতনা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি ভয়াবহ ফিতনা। দু:খজনক হলেও সত্য যে, এ ক্ষেত্রে নামধারী ইসলামপন্থীরাই সবচাইতে এগিয়ে। হিংসার বিষবাষ্প যে কতটা জঘন্য হতে পারে, নিকট অতীতে তা প্রত্যক্ষ করার সুযোগ আমাদের হয়েছে।
.
দিনরাত অন্যের মানহাজ উদ্ধারে ব্যস্ত আর সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্মানিত আলেমদের ছবির উপরে রেড ক্রস মেরে, উগ্রতা ফেরি করাই ওদের কাজ। প্রভুর দেখানো পথ গ্রহণ না করে ওরা নিজেদের প্রবৃত্তিকেই প্রভু বানিয়েছে। যতদিন নিজেদের মত ও চিন্তার সাথে মিলেছে ততোদিন বাহবা। আর নিজেদের মতের সামান্য বাইরে গেলে, শুরু হয় বাহারি ট্যাগ লাগানোর মহোৎসব।
.
এদের আচরণ কেমন যেন ভ্রস্ট ও অভিশপ্ত জাতিগোষ্ঠির স্বভাবের সাথে হুবহু মিলে যাচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করছেন: “নবি হে, ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা কখনোই আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না আপনি তাদের মতাদর্শের পুরোপুরি অনুসরণ না করবেন”। (বাকারাহ: ১২০)
.
আমি যে মতের উপর আছি শুধু মাত্র এটাই হক্ব বা আমি যে দল করি সে দলই কেবল জান্নাতি আর বাকীরা সবাই গোমরাহ, বাকীরা সবাই জাহান্নামী। এজাতীয় চিন্তা পরিহার করুন। চিন্তার এই বিভ্রাট আমাদেরকে দিনকে দিন দলকানা করে তুলেছে। দলান্ধতা ও মতান্ধতা আমাদেরকে শেষ করে দিচ্ছে।
.
আল্লাহ তায়ালার জান্নাত কী এতই ছোট যে অন্যকে জাহান্নামী বানিয়ে সেটা আমাদেরকে দখল করতে হবে? আপনার ঈমান কি এতই ঠুনকো যে আরেকজনকে ভ্রষ্ট প্রমাণ করেই সেটা রক্ষা করতে হবে? তথাকথিত সহিহ আক্বিদা যাদেরকে এতটুকু সহনশীলতার সবকও দিতে পারেনি তাদের প্রতি আসলেই করুনা হয়।
.
তাই, সময় এসেছে সকল প্রান্তিকতা পরিহার করে, কুরআন সুন্নাহর আলোকে মধ্যমপন্থা অবলম্বনের। ইনশাআল্লাহ, সেদিন বেশী দূরে নয়, যে দিন সকল উগ্রতা, বাড়াবাড়ি আর প্রান্তিকতা, অস্তিত্ব সংকটে পড়ে, মধ্যমপন্থার সৌন্দর্যের কাছে অসহায় হয়ে পড়বে।
.
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করছেনঃ
“এমনিভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী উম্মত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছি যাতে করে তোমরা পুরো মানবমন্ডলীর জন্যে সাক্ষ্যদাতা হও এবং যাতে রসূল হতে পারেন তোমাদের উপর সাক্ষী।” (বাকারাহ: ১৪৩)